অবশেষে জানা গেলো যে দুই কারণে মিন্নির জামিন হয়নি

বরগুনা: রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সঞ্জীব দাস বলেন, মূলত দুটি কারণে মিন্নির জামিন হয়নি। রিফাত হত্যা মামলার শুনানির পর বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী জামিন না দেয়ার দুটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বিচারক বলেছেন এ মামলার দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী এবং অন্যতম আসামি রাবিব আকন হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া মিন্নি নিজেও এ হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাই তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হলো।

রোববার (২১ জুলাই) বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী এ জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন।

আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, মিন্নির জামিন আবেদন আদালত নামঞ্জুর করেছেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে মিন্নির জামিনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করব আমরা।

এ ব্যাপারে নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, মিন্নির জামিন নামঞ্জুর হয়েছে এটা আমি শুনেছি। আমার একমাত্র ছেলেকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিন্নি জড়িত। তাই এ মামলায় অভিযুক্তদের আইনের ফাঁক দিয়ে জামিনে বেরিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে দুলাল শরীফ বলেন, প্রথমে মিন্নিকে এ মামলার আসামি করা হয়নি। কারণ আমার কিছুতেই বিশ্বাস হয়নি মিন্নি এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত। কিন্তু যখন আমি বুঝতে পেরেছি মিন্নি হত্যাকাণ্ডে জড়িত তখন আমি মিন্নিকে গ্রেফতারের জন্য সংবাদ সম্মেলনসহ মানববন্ধন করেছি। কাজেই তার জামিন হোক আমি তা চাই না।

এ বিষয়ে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, মিন্নিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জামিন দেয়ার এখতিয়ার নেই। তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি। কারণ আমার মেয়ে অসুস্থ। আমার মেয়ে নির্দোষ। তাই জামিনের জন্য আমি পরবর্তী কার্যক্রম চালিয়ে যাব।

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়েকে ফাঁসানো হয়েছে। যারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং হত্যাকারীরা যাদের ছত্রছায়ায় থেকেছে তারাই আসামিদের বাঁচানোর জন্য আমার মেয়েকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। আমি তাদের বিচার চাই।

গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরসহ মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনা পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যায় পুলিশ।

এরপর দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং পুলিশের কৌশলী ও বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আটকে যান মিন্নি। বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ। এরপরই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

বুধবার বিকেল ৩টার দিকে বরগুনার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিন্নিকে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে মিন্নির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী।

পরদিন বৃহস্পতিবার বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ ও বুধবার রিমান্ড মঞ্জুরের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ছিলেন আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। ইতোমধ্যে মিন্নি স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন।

রিমান্ড শেষে শুক্রবার মিন্নিকে আদালতে তোলা হয়। ওই সময় স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন মিন্নি। পরে তাকে কারাগারে পাঠান বিচারক।

রোববার মিন্নির জামিনের আবেদন করেন আইনজীবীরা। কিন্তু বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।

আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে মিন্নিসহ ১৪ জন অভিযুক্ত রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া এ মামলার দুজন অভিযুক্ত রিমান্ডে রয়েছেন। এ মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।

সোনালীনিউজ